হাঁসের খামারের ব্যবসা শুরু করবেন যেভাবে

হাঁসের খামারের ব্যবসা শুরু করবেন যেভাবে


Posted on: 2022-07-08 15:06:48 | Posted by: eibbuy.com
হাঁসের খামারের ব্যবসা শুরু করবেন যেভাবে

বর্তমানে দেশে গ্রাম অঞ্চলে  হাঁস পালন বেশ লাভজনক। বর্তমানে গ্রামের অনেক স্থানে বানিজ্যিক ভাবে  হাঁসের খামার  গড়ে উঠেছে। হাঁসের খামার বানিজ্যিক ভাবে করতে হলে  প্রশিক্ষণ  থাকতে হবে। প্রশিক্ষণ  না থাকলে  ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে হাঁস প্রজননকেন্দ্র। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিতে পারেন। এ ছাড়া সরকারি ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে যেমন - যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, পশু হাসপাতাল এ অনেক সময় প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে।   প্রশিক্ষণ ছাড়া আপনি ছোট পরিসরে হাঁসের খামার  করলে  ক্ষতি হবে না। তাছাড়া এই ব্যবসা করতে হলে বেশি পুজিও লাগে না। আপনি চাইলে শুরু করতে পারেন ।


খামারের জন্য স্থান নির্বাচনঃ 

হাঁস থাকার জন্য এমনভাবে খামার বানাতে হবে যাতে করে খামারে আলো বাতাস পায়। হাঁসের খামার  জলধারা বা নদীর আশে পাশে তৈরি করলে অনেক ভালো হবে। যাতে করে খামারের হাঁস  গুলা অতি সহজে পানি স্পর্স করতে পারে। খামারটা হতে হবে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে। যাতে করে খামারে আলো বাতাস খুব সহজে প্রবেশ করতে পারে। ১০ ফুট চওরা এবং২৫ ফুট লম্বা করে খামার বানাতে হবে। এবং উচুটা হতে হবে ৮ ফিট। 


যেভাবে হাঁসের বাসস্থান তৈরি করবেন :

# অল্প হাঁস পালন করলে ঘর হবে ছোট, বেশি হাঁস পালন করলে ঘর স্থায়ীভাবে বানাতে হবে।

# লম্বা সরু এবং চারকোণা ঘর হাঁসের খামারের জন্য উত্তম।

# আবহাওয়ার ও পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে ঘরের চালা বানাতে হবে।

# খরচ কমাতে বাঁশের দরজা ও পাতলা টিন ও ব্যবহার করতে পারেন তবে দুর্যোগ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ঘর বানাতে  হবে।

# ঘরের মেঝে পাকা করতে হবে এবং মেঝেতে তুষ বা কাঠের গুড়া ব্যবহার করতে হবে।

# ডিম পাড়ার সুবিধার জন্য হাঁসের ঘরের কোনে কিছুটা জায়গা করে দিতে হবে। এবং ডিম পাড়ার স্থানটি বেড়া দিয়ে দিতে হবে।


ঘরের ব্যবস্থপনাঃ 

হাঁসের ঘরের তাপমাত্রা সাধারণত ১২.৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৫৫ ডিগ্রি ফারেহাইট) থেকে ২৩.৯ ডিগ্রি সে. (৭৫ ডিগ্রি ফা.) পর্যন্ত উত্তম। হাঁসের খামারে হাঁস সাধারণত ৭০% আদ্রতা সহ্য করতে পারে। আদ্রতা ২০% কম হলে হাঁসের পাখনা ঝড়ে যায়। যার ফলে ডিম পাড়া কমে যাবে। তাই হাঁসের ঘরের মেঝে সব সময় শুকনো রাখা ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ধানের তুষ, কাঠের গুড়া হাঁসের বিছানা হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। 


জাত নির্বাচন

হাঁসের বিভিন্ন জাত আছে। তবে খামারের জন্য জিনডিং ও দেশি_এ দুই ধরনের হাঁসই ভালো। এগুলো মাংস ও ডিম উৎপাদনে আমাদের আবহাওয়ার উপযোগী। জিনডিং হাঁস কষ্টসহিঞ্চু, এদের পালন পদ্ধতিও সহজ। এরা বছরে ২৫০ থেকে ২৭০টি ডিম দেয়। দেশি কালো জাতের হাঁস উচ্চ মাত্রায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন। এগুলো বছরে ২০০ থেকে ২৩০টি ডিম দেয়। এদের মাংসও খুব সুস্বাদু।


হাঁসের পালন পদ্ধতি ও খাবার

হাঁস পালনে তেমন শ্রম দিতে হয় না। বাইরে ছেড়ে দিলে নিজেরাই খাবার সংগ্রহ করতে পারে। অতিরিক্ত খাদ্য চাহিদা মেটাতে চালের কুঁড়ার সঙ্গে ডাবি্লউ এস-এ, ডি, ই, বি-১, বি-২, বি-৬, বি-১২ ভিটামিনগুলো দেওয়া যেতে পারে। পাঁচ মাস পর থেকে হাঁসগুলো ডিম দেওয়া শুরু করবে। তিন বছর বয়স পর্যন্ত হাঁস পূর্ণ মাত্রায় ডিম দেয়। এরপর হাঁসগুলোকে বাজারে বিক্রি করে দিতে হবে। 


প্রয়োজনীয় পুঁজি

প্রাথমিকভাবে লাভের জন্য তিন বছরের পরিকল্পনা নিয়ে খামার গড়তে হবে। ১০০টা হাঁসের জন্য বাঁশের একটি ঘর বানাতে এককালীন খরচ পড়বে ১২ হাজার টাকা কম বেশি হতে পারে । ১১৫টি হাঁসের বাচ্চার দাম পড়বে এক হাজার ৩৮০ টাকা এটি বর্তমান সময় এ-র দাম । কুঁড়াপ্রতি বস্তা পড়বে ২০০ টাকা, মাসে এক বস্তা করে কুঁড়া লাগবে।  বি্লচিং পাউডার লাগবে মাসে পাঁচ কেজি। দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। তুষ বা কাঠের গুঁড়া লাগবে চার মাস অন্তর চার বস্তা করে। এক বস্তা কাঠের গুঁড়ার দাম ২৫০ টাকা।  ভ্যাকসিন লাগবে বছরে এক হাজার টাকা করে তিন বছরে তিন হাজার টাকার। 


লাভ কেমন

বছরে হাঁস ডিম দেয় গড়ে ২৩০টি। ১০০টি হাঁসের ৯০টি হাঁস ডিম দিলে বছরে ডিম পাওয়া যাবে ২০ হাজার ৭০০টি।  ডিমগুলি বর্তমান সময় ৪০ থেকে ৫০ টাকা হালি করে বিক্রি করা যায়। 

তিন বছর ডিম দেওয়ার পর একেকটা হাঁস গড়ে ২০০ টাকা থেকে ৩৫০  হিসাবে  বিক্রি করা যাবে। তবে লাভ এর বিষয় সম্পুর্ন আপনার উপর নির্ভর করবে। 


প্রশিক্ষণ

নারায়ণগঞ্জে আছে বাংলাদেশ সরকারের কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজননকেন্দ্র। এখান থেকে হাঁস পালনে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। খুলনার দৌলতপুরে, নওগাঁ, ফেনীর সোনাগাজী, কিশোরগঞ্জ ও রাঙামাটিতেও আছে প্রজননকেন্দ্র। আপনার কাছাকাছি কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করতে পারেন প্রয়োজনীয় হাঁসের বাচ্চা। হাঁসের খাবার ও ওষুধপত্র কিনতে পাওয়া যাবে প্রায় প্রতিটি বিভাগীয় শহরেই। ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় আছে পাখির খাদ্যের বৃহৎ বাজার। চালের মিল থেকে তুষ ও কুঁড়া সংগ্রহ করা যাবে। এ ছাড়া পশুখাদ্য দোকানেও তুষ ও কুঁড়া পাওয়া যায়। 


হাঁসের বিভিন্ন প্রকার রোগ এবং প্রতিরোধ ঃ

 হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ ভাল হলেও বেশ কিছু ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগে হাঁস মারা যেতে পারে। তাই হাঁস পালনের জন্য টিকা প্রদান বা হাঁসের ভ্যাকসিন সিডিউল খুব জরুরী।

হাঁস বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে আমাদের দেশে ডাক প্লেগ ও ডাক কলেরার কারনে হাঁসের মৃত্যুর রেকর্ড সবথেকে বেশী। তাই মূলত এই দুটি রোগের টিকা প্রদানের জন্য সরকারি ভাবে বলা হয়ে থাকে।

হাঁসের কলেরা রোগের কয়েকটি লক্ষণ দেখা যায়: ডাক কলেরা রোগটি অনেকটা হাঁসের প্লেগ রোগের সাথে মিল আছে।

১. হঠাৎ করেই সুস্থ হাঁস অনেক গুলো এক সাথে মারা যেতে পারে

২. আক্রান্ত হাঁস বারবার পাতলা মল ত্যাগ করতে পারে ফিকে সবুজ বা হলুদ রংয়ের।

৩. আক্রান্ত হাঁসের ক্ষুধা মন্দা হয় কিন্তু প্রচুর পানি পান করে।

৪. কলেরা রোগে আক্রান্ত হাঁসের চোখ মুখ ফুলে থাকে।

৫. কলেরা আক্রান্ত হাঁসের গায়ে জ্বর থাকে।

৬. কলেরা আক্রান্ত হবার পর ঝিমায় এবং চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

৭. আক্রান্ত হাঁসের কাণের লতি নীল বা কালচে বর্ণ ধারণ করে।

৮. আক্রান্ত হাঁসের চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও নাক, মুখ, দিয়ে লালা ঝরে।

৯. হাঁসের ডিম দেওয়া কমে আসে।

১০. এ রোগটির একেবারে শেষ দিকে হাঁসের দুপায়ের সন্ধি বা গাট বেশ ফুলে থাকে।

ডাক প্লেগ রোগ হলে পাতলা মলের সাথে সামান্য রক্ত দেখা যায় আর কলেরা হলে মলের সাথে রক্ত মোটেই থাকেনা।


হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

 হাঁসের খামার সব সময় পরিস্কার-পরিছন্ন রাখতে হবে। কোন সময় যদি খামারে এ রোগ দেখা দেয় রোগাক্রান্ত হাঁস আলাদা স্থানে রাখতে হবে। যে পাত্রে হাঁসের খাবার দেওয়া হয় খাওয়া হয়ে গেলে সাথে সাথে পরিস্কার করতে হবে। কলেরা রোগ না হয় সে জন্য আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া খামারের সকল হাঁসকে কলেরা রোগের টিকা দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।


হাঁসের টিকা প্রদান কর্মসূচি নিচে দেওয়া হলোঃ

বয়স (দিন)     - টিকার নাম     - রোগের নাম     টিকার ডোজ -     টিকা প্রাদানের স্থান ঃ-

২০-২২ দিন -       ডাক প্লেগ -     ডাক প্লেগ -     ১ মিলি     বুকের চামড়ার নীচে

৪০-৪২দিন -      ডাক প্লেগ -      ডাক প্লেগ     -  ১ মিলি     বুকের চামড়ার নীচে

৭০ দিন -    ডাক কলেরা -     ডাক কলেরা- ১ মিলি     বুকের চামড়ার নীচে

৯০ দিন - ডাক কলেরা -     ডাক কলেরা -      ১ মিলি     বুকের চামড়ার নীচে

১০০     - ডাক প্লেগ -       ডাক প্লেগ - ১ মিলি     বুকের বা রানের মাংসে

*এরপর প্রতি চার মাস অন্তর ডাক প্লেগ টিকা এবং ৬ মাস অন্তর ডাক কলেরা টিকা প্রদান করাতে হবে।

*উল্ল্যেখ্য বার্ড ফ্লুর প্রভাব বেশী থাকলে চার মাসে বার্ড ফ্লু টিকা দিতে হবে।

হাঁসের ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম

ডাক প্লেগ ১০০ ডোজের ভ্যাকসিন ১০০ মিলি পরিস্কার পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ভ্যাকসিন গান অথবা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রইয়োগ করা হয়। ডাক কলেরার ভ্যাকসিন লাইভ হলে একই নিয়মে দিতে হবে। 

সাবধানতা

হাঁসের প্রধান রোগ কলেরা আর প্লেগ। হাঁসকে এসব রোগের মড়ক থেকে রক্ষা করতে কিছু নিয়ম পালন করতে হয়। ধানের তুষ দিয়ে বানানো হাঁসের বিছানায় প্রতিদিন বি্লচিং এবং ভিরকন-এস প্রয়োগ করতে হবে। কেউ ভেতরে যেতে চাইলে ভাইরাস মুক্তকারী দ্রবণে পা চুবিয়ে নেওয়ার পর তাকে যেতে দিতে হবে। ভয় পেলে হাঁসের ডিম পাড়ায় বিঘ্ন ঘটে। তাই সব সময় খেয়াল রাখতে হবে, হাঁসগুলো যেন কোনো ভাবেই ভয় না পায়। একদিন থেকে দুই মাস বয়সের মধ্যে দুবার প্লেগ ও কলেরার টিকা দিতে হবে। এরপর প্রতি ছয় মাস পরপর টিকা দিতে হবে। সরকারি দপ্তর থেকে টিকার ভ্যাকসিন কেনাই ভালো। ভ্যাকসিন কেনার সময় দেখে নিতে হবে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে কি না। এরপর ক্রেতার কাছ থেকেই পরিবহনের সঠিক নিয়ম জেনে খামারে নিয়ে যেতে হবে। সঠিকভাবে পরিবহন না করলে ভ্যাকসিনের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।






Related Post

জনপ্রিয় পণ্য

সাম্প্রতিক পণ্য

Leave a Comment:

Comment as:

alibaba & Import Export expert

সি এন্ড এফ, আমদানি, আলিবাবা নিয়ে যেকোনো সমস্যায় আমাকে ফেসবুকে মেসেজ করুন

এখানে ক্লিক করুন
2017 © 2024 eibbuy. All Rights Reserved.
Developed By Fluttertune react js next js